সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 




মোহনপুর থানা পুলিশকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর  একটি চক্র 


নিজস্ব প্রতিনিধ,

 গত ৫ আগস্ট বিকেল থেকে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এমনকি থানা ও পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। এতে ভেঙে পড়ে পুলিশি ব্যবস্থা। এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটির সদস্যরা। 


দেশের থানা এবং ফাঁড়িগুলোতে পুলিশ না থাকার সুযোগে এখনও বিভিন্ন স্থানে চোর-ডাকাতের উপদ্রব এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের মাত্রা বেড়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর মোহনপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল হাননান সকল শঙ্কা ও ভয়কে জয় করে পুলিশ জনগণের জান মাল রক্ষায় এবং নিজেদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। তিনি মোহনপুর থানায় যোগদান করে কিছু চৌকস পুলিশ অফিসারদের নিয়ে যখন পুরো থানা এলাকাকে নিরাপত্তা চাদরে ঢাকার চেষ্টা করছেন তখনই একটি মহল থানা পুলিশকে বিতর্কিত করতে আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। যেখানে জনসাধারণকে পুলিশের পাশে দাঁড়ানোর কোন বিকল্প নেই। সেখানে পুলিশ মাঠ পর্যায়ে পুলিশিং ও অপরাধ দমন করতে গিয়ে এখনো পড়ছে জনরোষের কবলে। পুলিশকে বেকায়দায় ফেলে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ঘাপটি মেরে থাকা একটি কুচক্রী মহল এখনো রয়েছেন সক্রিয়। যারা আসল ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে জনগণকে মুখরোচক গল্প শোনাচ্ছেন তাদেরও জানা দরকার আসলে সঠিক ঘটনা কি? পাঠকদের জন্য তথ্যের মাধ্যমে দু'টি ঘটনা তুলে ধরা হলোঃ


ঘটনা প্রবাহ ১। গত ৯ জানুয়ারি

মোহনপুর থানা নিখোঁজ জিডির মাধ্যমে ও অপহৃত স্কুল ছাত্রীর পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, মোহনপুর থানা এলাকার ঘাসিগ্রাম ইউপির গোয়ালপাড়া গ্রামের হায়দার আলী (৪৪) মহিষকুন্ডি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী (১৪) স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কেশরহাট পৌর এলাকার আনোয়ারের বখাটে ছেলে শুভ হায়দার আলীর স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে না পেয়ে হায়দার আলী গত ৯ জানুয়ারী ২৫ তারিখে মোহনপুর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। জিডি নম্বর-৪৭০। জিডির সুত্র ধরে  তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই জোবায়ের  গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন নিখোঁজ ওই স্কুল শিক্ষার্থীকে

কেশরহাট পৌর এলাকার বিশালপুর গ্রামের আনোয়ারের ছেলে শুভ তার বাড়িতে আটকিয়ে রেখেছে। এএসআই জোবায়ের গোপন সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে মোহনপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাননানকে অবগত করে অফিসার ফোর্সসহ জিডির বাদি হায়দার আলী ও তার স্ত্রীসহ কেশরহাট পৌর এলাকার বিশালপুর গ্রামে শুভ'র বাড়িতে গেলে গ্রামবাসি একত্রিত হলে বখাটে শুভ ওই স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে তার স্ত্রী দাবি করে এবং মেয়েটিকে তার বাবা হায়দার আলী ও তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করে। এসময় স্থানীয় কিছু লোক চোলাইমদ পান করে এসে পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং এএসআই জোবায়ের হোসেন এর ওপর চড়াও হয়। সুযোগ বুঝে ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা ও তার মা অপহৃত মেয়েটিকে নিয়ে মোহনপুর থানায় চলে আসলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয় এবং কিছু মাতাল পুলিশকে ঘিরে ধরলে কেশরহাট পৌর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের সাহায্য পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে থানায় ফিরে আসে। পুলিশ ওই গ্রাম থেকে চলে আসার পর একটি কুচক্রী মহল গ্রামের লোকজনকে বলে আমাদের গ্রামের বৌকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে চল থানায় যাব। তারা কয়েকজন যুবকসহ বখাটে শুভ'র মা থানায় হাজির হয় এসময় তারা থানার ওসি র সাথে দেখা করে। মোহনপুর থানার ওসি আব্দুল হাননান ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে অপহরণ এবং তাকে এভিডেভিট করে বৌ দাবি আইনে কি কি শাস্তি হতে পারে খুলে বলে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এবং এবিষয়ে থানায় যেন তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্দমা না হয় সেকারনে ওসি'কে অনুরোধ করে ফিরে যায়। এসময় থানায় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


এবিষয়ে ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা হায়দার আলী ও তার দাদা ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটি মহিষকুন্ডি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে ফিরে না আসায় বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে তাকে না পেয়ে মোহনপুর থানায় একটি জিডি করি। জিডি করা দুই তিনদিন পরে পুলিশ আমাদেরকে সাথে নিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গেলে শুভ ও তার পরিবারের লোকজন ১৪ বছরের মেয়েটিকে বৌ দাবি করে। মেয়েটিকে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিতে চাইলে শুভসহ তার লোকজন পুলিশের সাথে তর্কে লিপ্ত হয় এবং খারাপ আচরণ করতে থাকে। সুযোগ বুঝে আমরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। শুভ বিরুদ্ধে আমরা মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি।



এবিষয়ে মোহনপুর থানা এএসআই জোবায়ের হোসেন বলেন, থানায় স্কুল ছাত্রী নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডি হয়। গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি নিখোঁজ স্কুল ছাত্রীকে কেশরহাট পৌর এলাকার বিশালপুর গ্রামে শুভ নামে একজন বাড়িতে আটকে রেখেছে। ওসি স্যারকে বিষয়টি অবহিত করে ওই ছাত্রীর বাবা মাকে নিয়ে ওই বাড়িতে গেলে স্থানীয় গ্রামবাসিসহ শুভ ও তার পরিবার মেয়েটিকে তার বাবা মার কাছে তুলে না দিয়ে পুলিশের উপর চড়াও হয়। পরবর্তীতে ওই স্কুল ছাত্রীকে থানা পুলিশের মাধ্যমে তার বাবা মার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 


ঘটনা প্রবাহ ২। মোহনপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল হাননানের নির্দেশে এসআই আবাদুল হাই সঙ্গীয় ফোর্সসহ ওয়ারেন্ট তামিল, মাদক উদ্ধারে থানা এলাকার ধুরইল ইউনিয়নের ধুরইল বাজারে পৌছালে সোর্স মারফত গোপন সংবাদ পেয়ে  জানতে পারেন কিছু লোক 

পিয়ারপুর আদিবাসিপাড়ায় মাদক ক্রয় বিক্রয় করিতেছে। পুলিশ সংবাদ পেয়ে বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাননানকে অবগত করে মাদক উদ্ধারে যান। পুলিশ মাদক স্পটে পৌছালে কয়েকজন মাদক সেবি পুলিশকে দেখে দ্রুত মাদকস্পট ত্যাগ করে চলে যেতে উদ্ধত হয় এসময় এসআই আব্দুল হাইসহ সঙ্গীয় ফোর্স বাঁধ এলাকায় পিয়ারপুর গ্রামে আক্কাস আলীর ছেলে ওয়াকিব হাসান(২৮) কে থামতে বললে সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে আদিবাসিসহ স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও তার লোকজন তাদের ঘিরে ধরে এবং আক্রমণাত্বক আচরন করলে এসআই আব্দুল হাই ওয়াকিব হাসানকে ছেড়ে দেন এবং থানায় ফিরে আসেন।


এবিষয়ে থানা পুলিশ এসআই আঃ হাই জানান, ওসি স্যারের নির্দেশে ওয়ারেন্ট তামিল, মাদক উদ্ধারে থানা এলাকার ধুরইল বাজার অবস্থানকালে সোর্স মারফত গোপন সংবাদ জানতে পারি পিয়ারপুর আদিবাসিপাড়ায় মাদক ক্রয় বিক্রয় করিতেছে তখন পুলিশের একটি টিম নিয়ে সেখানে পৌছালে কয়েকজন লোক দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় 

ওয়াকিব হাসান নামে একজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আদিবাসিসহ স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও তার লোকজন আমাদের ঘিরে ধরে অবস্থা বেগতিক হলে আমরা ফোর্সসহ থানায় ফিরে আসি।  


পুলিশ জানায়, পুলিশের পরপর দুটি ঘটনাকে পুঁজি করে মোহনপুরের একটি কুচক্রী মহল পুলিশের ভাবমূর্তি ও পুলিশ সদস্যরা যাতে আগের মত পূর্ণ সক্ষমতা

কাজ করায় মোহনপুর থানা এলাকায় 

একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অসুবিধা হচ্ছে। তারা চায় পুলিশ যেন মেরুদণ্ড সোজা করে কাজ করতে না পারে। সেকারণে পুলিশকে কোনঠাসা করতে প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে তারা।


এবিষয়ে সচেতন মহলের অনেকেই বলেছেন, পুলিশসহ রাষ্ট্রের সংস্কার চলছে। এখনও পুলিশের অবস্থা খুবই নাজুক। সেকারণে পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরো সতর্কতার সহিত কাজ করতে হবে। সকল ভেদাভেদ ভুলে পুলিশকে আমাদের সহায়তা করা দরকার।


এবিষয়ে মোহনপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাননান বলেন, আমি মোহনপুর থানায় যোগদানের পরে হতে কয়েক জন হাই ভোল্টেজ ফ্যাসিস্টকে গ্রেফতার সহ মোহনপুর এর বেশকিছু তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছি। পলাতক ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীসহ মাদক উদ্ধারে থানা পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করায় একটি স্বার্থন্বেষী মহল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই আসল ঘটনাগুলিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে আমার অফিসারদের দমিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। একাজে জড়িত কিছু লোকের তালিকা হাতে পেয়েছি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব। বিষয়টি উর্ধতন মহলকে জানানো হয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন