রাজশাহী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এখন সিণ্ডিকেটে জিম্মি
দুই টাকার সাংবাদিকরা নিউজ করে কিছুই করতে পারবে না?
২১-০৪-২০২৫
পাভেল ইসলাম মিমুল স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এখন অবৈধ সিণ্ডিকেটে বন্দী। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি সিণ্ডিকেট প্রতিষ্ঠানটিকে জিম্মি করে রেখেছে। এই সিণ্ডিকেটের কারণে রাজস্ব খাতভুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-
কর্মচারীরা কোণঠাসা হয়ে আছেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ ও সন্তোষ জিইয়ে রয়েছে। কিন্তু কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পান না।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সিণ্ডিকেটে রয়েছেন তার স্ত্রী গেস্ট ট্রেইনার (গার্মেণ্ট) শায়লা শারমিন,আতিকুর রহমান নামে একজন বহিরাগত,অ্যাসেট প্রজেক্টের ব্লক বাটিক ও স্কিন প্রিণ্টিংয়ের গেস্ট ট্রেইনার মুন্নী ও গার্মেণ্ট ট্রেডের ইনস্ট্রাক্টর শাহানাজ নাজনীন। এই সিণ্ডিকেটের সদস্যরা পতিত আ’লীগ সরকারের সক্রিয় সমর্থক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকারের পতনের পর আগের রাজনৈতিক অবস্থান বদলে নিজেদের স্বার্থে তারা বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী চেতনার বলে দাবি করছেন। এদের মধ্যে গেস্ট ট্রেইনার মুন্নী দম্ভোক্তি প্রকাশ করে বলেছেন তার ভাই একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। অনেক পাওয়ার। এছাড়া মুন্নীও অনেক প্রভাব রাখেন। তাই দুই টাকার সাংবাদিকরা নিউজ করে তাদের কিছুই করতে পারবে না বলে প্রায়ই দম্ভোক্তি প্রকাশ করেন।
এই মহিলা টিটিসির ভেতরে ও বাইরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি গুঞ্জন বর্তমানে ডালপালা মেলেছে। তা হলো গেস্ট ট্রেইনার মুন্নী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও কিভাবে গেস্ট ট্রেইনার হলেন?
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে গেস্ট ট্রেইনার হিসেবে নিয়োগ পেতে ব্লক বাটিক ও স্কিন প্রিণ্টিং ট্রেডে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মুন্নীসহ মোট তিনজন। এরমধ্যে বাকি দুইজন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মুন্নী অকৃতকার্য হন বলে পরীক্ষার সাথে সংশ্লিরা নিশ্চিত করেছেন। ওই পরীক্ষা কক্ষে সে সময় দায়িত্ব পালন করেছিলেন আবেদা খাতুন নামে একজন শিক্ষিকা। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অপসারিত ও পলাতক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের স্ত্রী শাহিন আকতার রেনীর তদবিরে মুন্নীর চাকরি হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি গেস্ট ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত আছেন।
আতিকুর রহমান নামে একজন বহিরাগত এই মহিলা টিটিসিতে চিফ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। যদিও তিনি প্রতিষ্ঠানটির কেউই নন। চিফ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও বাস্তবে তিনি প্রতিষ্ঠানটির বৈধ কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কোনো স্টাফই নন। কোনো পদেই তার বৈধ নিয়োগ না থাকলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পছন্দের লোক হওয়ায় তাকে অবৈধভাবে সেখানে চিফ ইনস্ট্রাক্টর পরিচয় দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিকল্প হিসেবে তিনি আয়-ব্যয় থেকে শুরু করে সব কিছুই দেখভাল করেন। আতিকুর রহমান সেখানকার অঘোষিত অধ্যক্ষ বলেও অনেকের মধ্যে পরিচিতি রয়েছে। এ নিয়ে রাজস্ব খাতভুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির অনেকের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলেন। সামান্য বিষয়েই উত্তেজিত ও রেগে যান। গালিগালাজ করেন। যখন কোনো বিষয় বুঝতে পারেন না, তখন বহিরাগত আতিকুর রহমানের সহযোগিতা নেন। ইনস্ট্রাক্টর শাহনাজ নাজনীনের সাথে এক সময় এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দা-কামড়া সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক এতোটাই খারাপ ছিল যে তার একটি ভিডিও সেমময় অনেকের হোয়াটস অ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ঘোরাফিরা করছিল। এছাড়া একটি ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করা হলেও পরে তা ডিলিট করে দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে তাদের সেই সম্পর্ক এখন আর নেই। তাদের মধ্যে এখন অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক বিরাজমান। তবে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক দৃশ্যমান হলেও আরেকটি জায়গায় তা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তা হলো ইনস্ট্রাক্টর শাহানাজ নাজনীনের সাথে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্ত্রী গেস্ট ট্রেইনার শায়লা শারমিনের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে। এরই জের কিছু দিন আগে টিটিসির অভ্যন্তরে ইনস্ট্রাক্টর শাহানাজ নাজনীনের সাথে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্ত্রী শায়লা শারমিনের প্রচণ্ড ঝগড়া ও বাক যুদ্ধ হয়। পরে বহিরাগত চিফ ইনস্ট্রাক্টর আতিকুর উড ট্রেডের ভেতরে নিয়ে গিয়ে মীমাংসা করে দিলেও তা এখনো পুরোপুরি নিরসন হয়নি।
এদিকে গার্মেণ্ট ট্রেডে পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম এই টেডের একমাত্র শাহানাজ নাজনীন রুমা ছাড়া বাকি সবাইকে অন্য ট্রেডে স্থানান্তর করে দিয়েছেন। আর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পছন্দের হওয়ায় আর্থিক সুবিধাদি দিতে শাহানাজ নাজনীন রুমাকে এই ট্রেডে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চিফ ইনস্ট্রাক্টর দাবিদার (বহিরাগত) আতিকুর রহমান বলেন, আমি এখানকার শিক্ষক। বহিরাগত না। তবে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।
জানতে চাইলে গেস্ট ট্রেইনার মুন্নী বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়। আমি নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হইনি। যোগ্যতা বলেই চাকরি হয়েছে আমার। যারা অভিযোগ করেছে তারা মিথ্যা বলেছে বলে দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছে কে অভিযোগ করেছে তার নাম বলেন, তাকে আমাদের সামনে হাজির করেন তার পরেও তথ্য দেবো। এখানে কোনো অনিয়ম হয় না। কোনো সিণ্ডিকেট নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন