জলবায়ু সুবিচারের দাবিতে পটুয়াখালী জেলার তরুণদের জলবায়ু ধর্মঘট ও পদযাত্রা
আব্দুল মান্নানঃ পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালী , ১১ এপ্রিল ২০২৫
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে দাবিতে পটুয়াখালী জেলায় জলবায়ু ধর্মঘট ও পদযাত্রা করেছেন ৫৫ তরুণ জলবায়ু কর্মী। শুক্রবার (১১ মার্চ) বেলা ১০ ঘটিকায় কুয়াকাটা সূর্য উদয় পয়েন্টে_সামনে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি সমুদ্র সৈকতে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
রঙিন ব্যানার, পোস্টার আর নানা শ্লোগানে মুখরিত ছিল সমাবেশস্থল। “ভুয়া সমাধান নয়, নবায়নযোগ্য শক্তি চাই”—এমন শ্লোগান তুলে ধরে তরুণরা বলেন, জ্বালানি নীতিতে নবায়নযোগ্য শক্তিকে অগ্রাধিকার না দিলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। তারা বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও অর্থায়ন বন্ধ করে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট তুলে ধরে তারা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে হলে জ্বালানি নীতিতে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর বিদ্যুতে বিশ্বের উন্নত দেশ এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের উপর গুরুত্বারোপ করে সমাবেশে জলবায়ুকর্মীরা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই বহুজাতিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) বাস্তবায়িত হলে ব্যয়বহুল ও দূষিত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরও বাড়বে, যা জলবায়ু লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা এই পরিকল্পনা দ্রুত সংশোধনের দাবি জানান।
অতিথির বক্তব্য,
ইয়ুথনেট গ্লোবাল পটুয়াখালী জেলার জেলা সমন্বয়ক মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া জলবায়ু ঋণ নিঃশর্তভাবে মওকুফ করার দাবিও জানানো হয়।
এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইয়ুথনেট গ্লোবাল'র পটুয়াখালী জেলা সহ- সমন্বয়কারী মো: মাসুম বিল্লাহ, সদস্য ___আবদুল মান্নান, সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, সাইফুল ইসলাম ইমন, মনির হোসাইন শান্ত, নাইমুল ইসলাম শাওন,নুর আলম, নাঈম বিশ্বাস, হাবিবুল্লাহ, ইসমাইল, প্রমুখ।
এছাড়াও জনাব কে এম বাচ্চু পরিবেশ ও পর্যটন কর্মী, বলেছেন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যার একটি বড় প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। ক্লাইমেট স্ট্রাইক" বা জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের কারণে এসব এলাকায় অতি বৃষ্টি, তীব্র খরা এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। এর ফলে কৃষিকাজে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, এবং পানি হয়ে পড়ছে লবণাক্ত। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সুপেয় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। বনভূমি, বিশেষ করে টেংরাগিরি,সুন্দর বনের মতো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি।
জলজ প্রাণীর মৃত্যু হার বেড়ে যাচ্ছে, মাছের উৎপাদন কমছে, এবং স্থানীয় মানুষের জীবিকা সংকটে পড়ছে। এসব পরিবেশগত পরিবর্তনের পাশাপাশি পানিবাহিত রোগ, চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়ে গেছে। এসব সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন, যাতে করে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা রক্ষা পায়।
ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, “জলবায়ু সংকটকে বিবেচনায় রেখে আমাদের শক্তি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আইইপিএমপিতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুবিধা নিশ্চিত না করে দরকার একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও স্থানীয় বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানো পরিকল্পনা।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ জীবাশ্ম জ্বালানির মুনাফার জন্য বিক্রি করা চলবে না। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারই একমাত্র টেকসই পথ।”
সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গের গড়ে তোলা স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ‘ইয়ুথনেট গ্লোবাল’, এবং ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ গ্রুপ’ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একই দিনে দেশের ৫০টি জেলায় একযোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তে ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশে ইয়ুথনেট গ্লোবাল প্রতিবছর এই বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে।
إرسال تعليق